“নিখিল ও নীড় জনমানবের সমস্ত নিয়মে
সজন নির্জন হ’য়ে থেকে
ভয় প্রেম জ্ঞান ভুল আমাদের মানবতা
রোল
উত্তরপ্রবেশ করে আরো বড়ো চেতনার লোকে;
অনন্ত সূর্যের অস্ত শেষ ক’রে দিয়ে
বীতশোক হে অশোক সঙ্গী ইতিহাস,
এ-ভোর নবীন ব’লে মেনে নিতে হয়;
এখন তৃতীয় অঙ্ক অতএব; আগুনে আলোয়
জ্যোতির্ময়।”
‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যগ্রন্থের ‘উত্তরপ্রবেশ’
শীর্ষক কবিতার অন্তিম স্তবকের অন্তিম উচ্চারণের প্রায় প্রারম্ভিক ‘শব্দগুচ্ছ’-কে শিরোভূষণ করা আত্মজৈবনিক নাটক ‘তৃতীয় অঙ্ক, অতএব’-এর শেষে অসুস্থ নট, নাট্যকার ও পরিচালক
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আবৃত্তি করেন জীবনানন্দের এই পঙ্ক্তি কয়খানি। জীবনের অনেকানেক টালমাটাল পেরিয়ে,
মূহুর্মূহু পরিবর্তিত কালাকালেও স্বকীয় তাৎপর্য বজায় রাখার মতো কঠিন চৌকাঠ আয়াসহীন
ডিঙোতে ডিঙোতে, আজ জীবনের তৃতীয় অঙ্কে পৌঁছে, এ নাটকে যেন দর্পণের মুখোমুখি তিনি
--- নতুনতরভাবে পুনরাবিস্কৃত হবার জন্য। বস্তুত, এ নাটকের নট-নটী ত্রয়ীর
প্রত্যেকেই protagonist সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের এক-একটি projection; যাঁদের দেখেই তৎক্ষণাৎ মনে
পড়ে যায় ‘দিবারাত্রির কাব্য’-র প্রারম্ভে মানিকবাবুর সেই উদ্ধৃতি : “দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া,
অস্বাভাবিক, --- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয়, উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের
এ একটা নতুন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে
সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায় সেইগুলি কেউ মানুষ নয়,
মানুষের projection --- মানুষের এক টুকরো মানসিক অংশ।”
প্রকৃত
প্রস্তাবে, এঁরা তিনজন যে একই মানুষের ভিন্ন ভিন্ন projection, তার প্রথম আভাস মেলে
পর্দা ওঠবার পর মঞ্চের উপর তিনখানি একই রকম অবয়ব দেখে, যারা চকিতে উস্কে দেয় Beckett-এর সেই প্রণিধানযোগ্য dramaticule ‘Come and Go’-এর স্মৃতি। সেখানে তিন নারী Flo-(wer), Vi-(olet) এবং Ru-(e) তিনখানি ভিন্ন রঙের লংকোট–এ দৃশ্যমান হলেও, এখানে আমরা
দুই পুরুষ ও এক নারীকে একই রঙের পোশাকে দেখতে পাই। প্রাথমিক এই বেকেটীয় ধাক্কাখানি
ভালোভাবে সামলে ওঠার আগেই ফের একখানি রাম-ধাক্কা দেন পরিচালক সৌমিত্র, যখন পর্দা উন্মোচনের অব্যবহিত
পরেই নাটকের প্রথম সংলাপটি উচ্চারিত হয় : “আচ্ছা ... শেষ কবে আমরা একসঙ্গে বসেছিলাম?”
‘Come and Go’-এর প্রারম্ভিক সংলাপেও তো এমনটাই বলেছিলো Vi
: “When did we three last meet?” ফের মগজে ধাক্কা লাগে, আর মনে
পড়ে যায় Shakespeare-এর ‘Macbeth’ --- সেখানেও ছিলো না, সেই তিন ডাইনি বুড়ি; আর নাটকের এক্কেবারে শুরুতেই, ঐ প্রথম
ডাইনিটা এরকমই কিছু বলেছিলো না : “When shall we three meet again?” [I, i,
1] সংযোগের সুতোটা তবে কোনখানে?
গোটা
‘Macbeth’
নাটকে Shakespeare একটিবারের জন্যেও ‘witch’ শব্দটা ব্যবহার
করেন নি; তিন ডাইনিকে তিনি বরাবরই উল্লেখ করেছেন “the weird sisters” বলে। এখন, এই ‘weird’ শব্দটি এসেছে Old
English ‘wyrd’ থেকে, যার অর্থ ‘fate’ বা
‘ভাগ্য’। Shakespeare-এর ‘Macbeth’-এর উৎস যে Holinshed-এর ‘Chronicles’, সেখানে এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থের
ইঙ্গিত আরো সুস্পষ্ট --- “the goddesses of destiny”। অর্থাৎ,
গ্রীক পুরানের সেই নিয়তিরা তিন বোন, সুতোর গুলি হাতে ক্রীড়ারত, কখনো ম্যাকবেথের
ভাগ্য লেখে, আবার কখনো বা Beckett-এর নাটকের কেন্দ্রীয়
বিষয় করে তোলে মানুষের নিয়তিকেই। Beckett-এর তিন নারী নিজেদের
মধ্যে ফিসফিসিয়ে যে মরণশীলতার অনিবার্যতা বিনিময় করে, তা প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁদের
অনুচ্চারিত ‘threnody’-কেই প্রকটতর করে তোলে --- আলগোছে
মনে করিয়ে দেয়, যে তাঁদের প্রত্যেকেই যে একই দুরারোগ্য প্রাণঘাতী ব্যাধিতে আক্রান্ত,
তা নিছকই ‘মৃত্যু’ --- প্রত্যেক জীবিত মানুষের এক অমোঘ নিয়তি মাত্র। ‘তৃতীয় অঙ্ক, অতএব’-এর তিন চরিত্রও তাঁদের আলাপে-সংলাপে যে সকল তির্যক আভাস
ভাসিয়ে দেয় বদ্ধ প্রেক্ষাগৃহের বাতাসে, বস্তুত তা অভিনয়-জীবনের অন্তিম লগ্নে দাঁড়ানো
অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু-অনুভূতিকেই বারবার সূচিত করে; এবং এর
প্রতিক্রিয়ায়, প্রতি বার অনুভূত হয় তাঁর অসীম, অপার জীবনবোধ।
প্রস্টেটের
ক্যানসারে আক্রান্ত সৌমিত্র, কার্ডিয়াক
অ্যারেস্টে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সৌমিত্র, কানের পর্দা ছিঁড়ে রক্তপাতে
অর্ধ-বধির সৌমিত্র, কি অক্লান্ত দাপটে সাপ-লুডো খেলে চলেন তাঁর নিয়তির সাথে; আর
প্রত্যেক বার, তিনি নিজের দান চালার আগেই, নিয়তিরা তিন বোন তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়
--- “দে ছুট” ... কেননা, সময় ফুরিয়ে আসছে ... “দে ছুট” ... কেননা, time is running out ... “দে ছুট”। প্রাক-স্বাধীনতা
সারল্যের শৈশব-স্মৃতি, স্ত্রী দীপার সাথে যৌবনের প্রণয়-স্মৃতি, ‘অপুর সংসার’ থেকে
‘রাজা লীয়ার’-এর চলচ্চিত্রের পর্দা তথা নাট্যমঞ্চ জুড়ে অবাধ, অনায়াস career
journey-র স্মৃতি --- এই সবকিছুই যখন সংলাপের আকারে চক্রবৎ আবর্তিত
হতে থাকে বারবার মঞ্চ আবহে, এবং নির্মাণ করতে থাকে একের পর এক অতুলনীয় সব
‘দৃশ্যকল্প’ বা ‘image’; তখন সেলিব্রিটি নায়ক protagonist-এর
এই অকপট আত্মকথন বাস্তবিকই এক সৎ, আবডালহীন জীবন-আলেখ্য হয়ে উঠে জানিয়ে দেয়, যে
তাঁর যাবতীয় খ্যাতি-গৌরব-সম্মান প্রসূত শ্লাঘা, আপাত স্বর্গসম সুখ, ও সন্তোষ-এর
অন্তরলীন এক যন্ত্রণা তাঁকে সমান্তরালে নরকদর্শনেও বাধ্য করে চলেছে সারা জীবন ধরে।
ফের মনে পড়ে যায় ‘Macbeth’-এর ডাইনিদের সেই চক্রাকারে
ঘুরে-ঘুরে নেচে-নেচে “hell broth” তৈরির দৃশ্যের অনুষঙ্গ;
মনে পড়ে যায় ‘King Lear’-এ Edgar-এর
সেই অসহায় উচ্চারণ : “Men must endure / Their going hence, even as their
coming hither : ” [V, ii, 10-11]
বস্তুত, আমরা ‘আসি’ (come) এবং ‘যাই’ (go)। নিয়তিরা তিন বোন উদ্দেশ্যহীনভাবে আমাদের নিয়ে এক প্যাকেট তাসের মতো ‘shuffle’
করে চলে --- ওপরে নিচে আগে পিছে ডাইনে বাঁয়ে। নির্বোধ আমরা নিজেদের
হাত-পায়ের নড়াচড়ার শব্দ শুনে সময় মাপার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলি; মরিয়া হয়ে উঠে
গুঁতোগুঁতি করে চলি কোথাও একটা পৌঁছোবার জন্য; কিন্তু শেষ তক, কিছুই পেরে উঠি না। তাই,
বেকেটীয় দর্শণ মতে, জীবনমরণ চক্রের চূড়ান্ত অর্থ হলো ‘অর্থহীনতা’; কেননা এই দুইয়ের
মধ্যবর্তী সময়ে প্রাপ্তি বলতে কেবলই যন্ত্রণা। ‘তৃতীয় অঙ্ক, অতএব’-এর নির্মাণে,
দৃশ্য-সংলাপ-অবয়ব ইত্যাদি যেভাবে --- এই ‘আসা’ (coming) আর ‘যাওয়া’ (going), ‘জন্ম’
ও ‘মৃত্যু’, protagonist-এর ‘জীবনবোধ’ এবং
‘মৃত্যু-অনুভূতি’, মানুষের ‘মরণশীলতা’ তথা মৃত্যুর ‘অমরত্ব’ --- এহেন প্রত্যেক ও
সমস্ত বিপ্রতীপতার বিনির্মাণে, এক চিরন্তন দ্বন্দ্বের দ্যোতনা সূচিত করে, তা যেন
আবার সেই মার্ক্সীয় ‘dialectics’-এর পথেই আমাদের চেতনাকে
চালিত করে। ‘Thesis’ ও ‘Anti-thesis’-এর সংঘাত প্রতিবারই উন্মুক্ত করে দেয় এক নবতর ‘Synthesis’-এর অভিমুখ। Hegel তাঁর ‘The
Phenomenology of Spirit’-এ মানুষের আত্ম-চেতনা ব্যাখ্যা করতে
গিয়ে বলেছিলেন, যে মানুষের যাবতীয় চিন্তাভাবনার পিছনে কাজ করে এক ‘নাকচ তত্ত্ব’ বা
‘principle of negation’, যা প্রত্যেক ‘Thesis’-এর বিপরীতে এক বিপ্রতীপ, নাকচ-প্রবণ ‘Anti-thesis’-এর জন্ম দেয়; যা থেকে আবার গড়ে ওঠে এক ‘Synthesis’, যা প্রত্যেক নাকচ-প্রবণ ‘Anti-thesis’-কেও নাকচ
করে দেয়। Hegel-এর এই তত্ত্বকেই ঘষামাজা করে Marx দেখালেন, যে মানুষ তাঁর জীবদ্দশায় নিরন্তর যে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়, তা
তাঁর তৎকালীন অস্তিত্বের পুনর্নির্মাণ ঘটায়। এই হলো ‘Thesis’। এই দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পেতে যে আপ্রাণ চেষ্টা মানুষ এরপর চালায়, তা
হয়ে ওঠে ‘Anti-thesis’। আর এই দুইয়ের সংঘাতে, আপাত
বিপরীতমুখী যুক্তির দ্বন্দ্বে (dialectics), যে নতুন সত্য
উন্মোচিত হয় তা-ই হলো ‘Synthesis’।
প্রকৃত প্রস্তাবে, মঞ্চের ঐ তিন চরিত্র-অবয়বরা, মার্ক্সীয়
‘dialectics’-এর এই
মূল তিন উপাদানেরই ‘রূপক’ প্রতিনিধি নন কি? --- (যে রূপকের কথা মানিক বলেছেন তাঁর
‘দিবারাত্রির কাব্য’-র প্রারম্ভে) --- এবং এঁরা তো এই ‘Thesis–Antithesis-Synthesis’
ত্রয়ীর অন্তর্বর্তী রসায়নের সাহায্যেই, মঞ্চ জুড়ে ক্রমাগত গড়ে তুলতে
থাকেন, protagonist সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মহাকাব্যিক
আত্ম-আলেখ্য বয়ানের মানানসই এক দ্বন্দ্বমূলক আধার-কাঠামো। উন্মোচিত হয় চলচ্চিত্র
তারকার ‘বাস্তব’ (real) জীবন, উন্মোচিত হয় সেলিব্রিটি নায়কের ‘সত্য’ (true) অবয়ব, উন্মোচিত হন রক্তমাংসের মানুষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বস্তুত, যে
সৃষ্টি মানুষের ‘psychological space’-কে আত্ম-উন্মোচনের উপযোগী ও বিস্তৃত দ্বান্দ্বিক গতি এনে দেয় না, তা
তো ‘সৃষ্টি’ পদবাচ্যই হয়ে উঠতে পারে না আদৌ।
ফরাসী সাহিত্য-তাত্ত্বিক Jean Baudrillard-এর মতে, আজ আমাদের এই
উত্তরাধুনিক সময়ে ‘বাস্তব’ বা ‘real’-এর প্রকাশ বা
প্রতিফলন ঘটানো কোনোভাবেই আর সম্ভব নয়। কারণ, ‘দৃশ্যকল্প’ বা ‘image’-কে সেই
সক্ষমতার স্তরে বা মানে বিকশিত ও বর্ধিত হতে দেওয়ার পরিসর তৈরি করা --- যেখানে সে ‘বাস্তব’
(real) বা ‘সত্যনিষ্ঠ’ (truthful)-কে এবং
‘কৃত্রিম’ (artificial) বা ‘কাল্পনিক’ (fictional)-কে পৃথকভাবে
চিহ্নিতকরণ তথা সনাক্তকরণের মতো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে --- এখন কার্যতই অতীব
দুরূহ। তাই অভিনয়ের ‘পরিবেশনা’ (simulation)-কে তিনি সংজ্ঞায়িত
করেছেন ‘উপস্থাপনা’ বা ‘প্রতিনিধিত্বকরণ’ (representation)-এর ঋণাত্মক বা নেতিবাচক (negative) অভিমুখ হিসেবে। তিনি বলছেন,
যখন ‘উপস্থাপনা’ (representation) নির্ভর করে ‘বাস্তব’ (original
/ real)-এর অস্তিত্বের উপর, অভিনয়ের ‘পরিবেশনা’ (simulation) তখন হয়ে ওঠে ঐ ‘বাস্তব’ (original)-এর ‘পুনঃ-পরিবেশনা’,
অর্থাৎ ‘re-presentation’ বা ‘উপ-স্থাপনা’। আর তখন --- “simulation
is no longer a territory, a referential being, or a substance. It is the
generation by models of a real without origin or reality : a hyperreal.” অতঃপর, একটি ‘দৃশ্যকল্প’ বা ‘image’-এর বর্ধিত ও বিকশিত হওয়ার চারটি
প্রধান ‘দশা’ (phase) সুনির্দিষ্ট করে দেন Baudrillard : “(1)
It is the reflection of a profound reality; (2) It masks and denatures a
profound reality; (3) It masks the absence of a profound reality; (4) It has no
relation to any reality whatsoever : it is its own pure simulacrum.” ‘তৃতীয় অঙ্ক, অতএব’-এর ক্ষেত্রে, বলাই বাহুল্য, নাট্যকার সৌমিত্রের কলম, Baudrillard-এর ‘hyperreal’
তথা ‘hyperspace’-এর এহেন উত্তরাধুনিক মঞ্চ-ভাবনার সকল সম্ভাবনা তথা রসায়ন সমূহকে পূরণই শুধু করে নি, কোথাও কোথাও এমনকি অতিক্রম
পর্যন্ত করে ফেলেছে।
তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘Dictionary of the Theatre : Terms, Concepts and
Analysis’-এ ফরাসী নাট্য-তাত্ত্বিক Patrice Pavis ‘মঞ্চ-স্থান’ বা ‘stage space’-এর সংজ্ঞা
নির্ণয় করতে গিয়ে বলছেন, যে মঞ্চের ওপরের যতখানি স্থান দর্শকদের কাছে ‘প্রকৃতই
দৃশ্যমান’ (actually visible), এবং যার সীমারেখা-পরিসর-পরিধি নির্ধারিত হচ্ছে
নাটকীয় পরিস্থিতিসমূহের উত্তুঙ্গ মুহূর্তগুলির ‘এখানে-সেখানে’ (here & there)-র
তথা ‘এখন-তখন’ (now & then)-এর সাপেক্ষে
মঞ্চের নট-নটীদের যথাক্রমে ‘স্থানিক’ (spatial) এবং
‘কালগত’ বা ‘সাময়িক’ (temporal) অস্তিত্বের নিরিখে, তা-ই প্রকৃত ‘মঞ্চ-স্থান’
বা ‘stage space’। এই ‘এখানে-সেখানে’-র ‘স্থান’ (place) এবং ‘এখন-তখন’-এর ‘কাল’ (time), তথা তৎ-সহযোগী আনুসঙ্গিক ‘স্বর’
(voice), ‘শব্দ’ (sound), ‘আলো’ (light) ও নট-নটীদের ‘চলন-গমন’ (movement) দ্বারা নির্মিত ‘মঞ্চ-স্থান’ (stage space) কার্যকরী
হয় একটি ‘চিহ্ন’ বা ‘দ্যোতনা’ (sign) রূপে, যা নিরবচ্ছিন্নভাবে
দোদুল্যমান রয়, আন্দোলিত হতে থাকে, ‘মূর্ত’ (tangible) এবং
‘বিমূর্ত’ (abstract) অনুভূতিদ্বয়ের মধ্যে --- ‘signifier’ ও ‘signified’-এর মধ্যে।
পরিচালক সৌমিত্র যে আয়াসহীন হেলায় এই দোদুল্যমানতা দেখালেন ও ব্যবহার করলেন তাঁর
এই নাটকে, তা বোধ করি তাঁর আগে কেউ এত সার্থকভাবে করে উঠতে পারেন নি, অন্তত বাংলা
নাটকের দুনিয়ায় তো নয়ই।
প্রথমেই ঝেড়ে কেশে যে
কথাটা বলে রাখলে ভালো হতো, সে কথাটা না হয় পরিশেষেই বলি। এ নাটক অর্ধ-শিক্ষিত
ব্রয়লার দর্শকদের জন্য একেবারেই নয়। যে সমস্ত বাঙালী সংস্কৃতি-শকুনগুলো (culture vultures) পাউডার মাখা
মাঝারিয়ানাকে (mediocrity) ভগবানের বাচ্চা ভাবতে ভালোবাসে
--- এ নাটক তাদের জন্য তো নৈব নৈব চ। (ইতরের দেশে অবশ্য এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।) একটু
‘minimum homework’, ন্যূনতম পড়াশুনা না করে এলে কিন্তু এ
বাদামের খোল ভাঙ্গতে পারা যাবে না। বিশেষ কিছু গজালেই যে বালকরা সাবালক হয় না, ইতরের
দল আর কবে তা বুঝে উঠতে পারবে!
No comments:
Post a Comment